By সজীব সরকার
সম্পাদকীয় লেখার প্রক্রিয়া
Media School August 6, 2025

প্রতীকী ছবি
সম্পাদকীয় লেখার জন্য প্রথমেই দরকার আলোচনার যোগ্য একটি বিষয় বাছাই করা। এরপর এ বিষয়ে বক্তব্য বা ভাষ্য নির্ধারণ করতে হবে। সবশেষ কাজ হলো এর চূড়ান্ত একটি লিখিত রূপ দেওয়া।
কিছু ধাপ অনুসরণ করলে ভালো মানের সম্পাদকীয় লেখার কাজটি সহজ ও সম্পূর্ণ হবে। যেমন :
১. বিষয় নির্বাচন : প্রথম কাজই হলো উপযুক্ত একটি বিষয় নির্ধারণ। এজন্য :
- সম্ভাব্য বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন এবং এসবের মধ্য থেকে উপযুক্ত বিষয়টি বেছে নিন।
- ওই বিষয়ে সম্পাদকীয় অবস্থান বা বক্তব্য কী হবে, সেটি স্পষ্টভাবে ভাবুন।
২. তথ্য সংগ্রহ ও কাঠামো নির্ধারণ : দ্বিতীয় ধাপের কাজ হলো ওই বিষয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত খুঁজে দেখা এবং লেখার একটি কাঠামো ভেবে নেওয়া। এজন্য :
- নিজের মতামতের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে - এমন তথ্য-উপাত্ত খুঁজে বের করতে হবে। এসব তথ্য যেন নির্ভুল, নির্ভরযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
- সম্পাদকীয়তে যা বলা হচ্ছে, এর বিপক্ষে বা পাল্টা কী যুক্তি আসতে পারে- সেটিও ভেবে দেখুন।
- এবার খসড়া একটি কাঠামো তৈরি করুন। এতে অবশ্যই যা থাকতে হবে :
ক. সূচনা বক্তব্য
খ. আপনার বক্তব্য বা মতামতের যৌক্তিক ব্যাখ্যা
গ. সমাপনী বক্তব্য
৩. লেখা শুরু : এই ধাপে এসে সম্পাদকীয় লেখার কাজ শুরু করতে হবে। লেখার সময় বিবেচনায় রাখতে হবে :
- লেখাটির জন্য চমৎকার একটি শিরোনাম লিখতে হবে। বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে সহজ ও কম শব্দে শিরোনাম লেখা উচিৎ।
- সূচনা বক্তব্য অনেক ভেবে-চিন্তে লিখতে হবে যেন তা পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। এ ছাড়াও, সম্পাদকীয়তে যা বলতে চাওয়া হচ্ছে, তা যেন স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারে - সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
- পরবর্তী অনুচ্ছেদগুলোতে বক্তব্য বা মতামতের পক্ষে জোরালো যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে। প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত বা উদাহরণ ব্যবহার করলে যুক্তি আরো জোরালো হয়।
- সম্ভাব্য বিরোধী যে মত বা যুক্তি উত্থাপিত হতে পারে, সেগুলো ভেবে বের করুন। এরপর সেগুলোকে যুক্তিসহ খণ্ডন করতে হবে। আপনার মত বা যুক্তিটি কেন এই সবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো বা শক্তিশালী, তা যুক্তি ও প্রমাণসহ প্রতিষ্ঠা করুন। এভাবে নিজের উপস্থাপিত মত বা যুক্তিকে শক্তভাবে উপস্থাপন করুন।
- সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করুন। লেখার শেষদিকে এসে জোরালো একটি বক্তব্য থাকতে হবে। এমনভাবে লিখুন, যেন এটি পাঠককে উৎসাহিত, উদ্যমী ও উদ্যোগী করতে পারে।
৪. খসড়া চূড়ান্ত করা : লেখা শেষ হয়ে গেলে নিজে 'পাঠক' হিসেবে কয়েকবার এটি পড়ুন। যেখানে দরকার, পরিমার্জনা করুন। সম্পাদনা ও প্রুফ রিডিংয়ের মধ্য দিয়ে খসড়া লেখাটিকে চূড়ান্ত লেখায় রূপ দিন। এ সময় খেয়াল রাখতে হবে :
- প্রতিটি বাক্য যথাসম্ভব ছোট ও সহজ হওয়া দরকার।
- বিশেষায়িত কোনো শব্দ (জার্গন) - যা সব পাঠক বুঝতে পারবে না, এসবের ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। বিষয়গুলো সহজ করে ভেঙ্গে বলুন।
- অনুচ্ছেদগুলো ছোট হওয়া দরকার।
- যা বলার, তা স্পষ্ট করে বলতে হবে; লেখার মধ্যে কোনোরকম অস্পষ্টতা যেন না থাকে। ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কিছু বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। সম্পাদকীয় সাধারণত আকারে ছোট থাকে; তাই, যা বলতে চান, তা সরাসরি বলুন।
- সার্বিকভাবে, লেখার মধ্যে পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে হবে। শব্দচয়ন, বাক্যগঠন ও যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের ভাষা সহনশীল ও শ্রদ্ধাপূর্ণ হতে হবে। কোনো ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ বা আক্রোশ থাকা যাবে না।