Media School

Dhaka    Friday, 26 April 2024

By নুসরাত জাহান

আফগানিস্তানে রাজতন্ত্র থেকে তালেবান শাসন : ঘটনাক্রম

Media School September 21, 2021

রাজধানী কাবুল দখলের পর প্রেসিডেন্ট ভবনে তালেবান বাহিনী। ছবি : এপি।

১৯৩৩ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ একটি সময় আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ও শান্তি বিরাজমান ছিলো। জাহির শাহ ছিলেন সে সময় দেশটির শেষ রাজা। তার এক ভাই মোহাম্মদ দাউদ খান তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। দাউদ খানের হাত ধরেই দেশে প্রথমবারের মতো রাজতন্ত্রের পরিবর্তে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি হন গণতান্ত্রিক দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তিনি সফলভাবে দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হন। কারণ, তার শাসনামলেই দেশ পর পর কয়েকবার খরাপীড়িত হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও দেশময় ছড়িয়ে পড়ে দুর্নীতি; একইসঙ্গে ছিলো দুর্বল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও।

১৯৬৫ সালে আফগানিস্তানে গড়ে ওঠে People's Democratic Party of Afghanistan (PDPA) নামের কমিউনিস্ট দল। এ দলের সঙ্গে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সখ্য ছিলো। এরপরও দলটির একাংশ প্রেসিডেন্টের সমর্থন লাভ করে। এর ফলে একদিকে তখন গণতান্ত্রিক আফগানিস্তানে যেমন সোভিয়েত বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেতে থাকে, তেমনি সরকার ও সেনাবাহিনীতে বাড়তে থাকে পিডিপিএ-এর প্রভাব।

১৯৭৬ সালে দাউদ খান এ প্রভাব কমানোর জন্য সরকার থেকে পিডিপিএ-এর সদস্যদের বরখাস্ত করাসহ দল বিলুপ্ত ঘোষণা করেন এবং দলের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তার করেন।

১৯৭৮ সাল থেকে আফগানিস্তানের শাসনব্যবস্থার দৃশ্যপট দ্রুত পাল্টাতে শুরু করে। কারণ, এ সময় প্রথমে পিডিপিএ সমর্থিত সামরিক বাহিনীর একাংশের সেনা অভ্যুত্থ্যান ঘটে। ক্ষমতায় আসতে তারা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দাউদ খান ও তার পরিবারের সদস্যসহ দেহরক্ষীকে হত্যা করে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার নিরীহ আফগান জনগণকে হত্যারও অভিযোগ রয়েছে।

১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন দেশটির বিশৃঙ্খল অবস্থার সুযোগ নিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করে এবং পিডিপিএ-এর আরেক অংশকে ক্ষমতায় বসায়। এমন এক সময় সোভিয়েত বাহিনী দেশটিতে প্রবেশ করে যখন এরইমধ্যে তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তখন দেশটি থেকে সোভিয়েত বাহিনী হঠাতে সেখানে হাজির হয় যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, এ সময় যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং চীনের মতো দেশ। এ ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারী প্রত্যেকটি রাষ্ট্রেরই নিজ নিজ উদ্দেশ্য থাকলেও একসঙ্গে তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধে জয়ী হতে তারা কাজে লাগায় উপত্যকা, মরুভূমির মতো ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিকভাবে অত্যন্ত বৈরি একটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুজাহিদীনদের, যারা ছিলো সে সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী। এ সময় ওই বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে (মুজাহিদীন) শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা (যথাক্রমে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্ট এজেন্সি বা সিআইএ এবং ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই) তাদের আধুনিক অস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। একইসঙ্গে বিভিন্ন আরব দেশ থেকে অনেক ‘আফগান আরব’ এসে এ দলে যোগ দেয়। এদের মধ্যে পরবর্তী আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনও ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান ত্যাগ করে। কারণ প্রতিরোধের মুখে তারা এটা বুঝতে পারে যে তাদের পক্ষে পিডিপিএ-এর সরকার টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তখন দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্রদের সঙ্গে চুক্তি করে যুদ্ধের অবসান করে এবং উভয় পক্ষই আফগানিস্তান ত্যাগ করে।

১৯৯২ সালে মুজাহিদীন কমান্ডার বুরহানউদ্দীন দেশটির ক্ষমতায় আসেন।

১৯৯৪ সালে পাকিস্তানের মাদ্রাসা থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া এক মুজাহিদীন সদস্য মোহাম্মদ ওমর দেশে ফিরে এসে প্রথম তালেবান দল গঠন করে ও সদস্য সংগ্রহ শুরু করে। 'তালেবান' নামে গঠিত নতুন এ দলের সদস্যদের তখন ‘তালেব’ বলে উল্লেখ করা হয়। এ দলই প্রথম আফগানিস্তানে কঠোর শরিয়াহভিত্তিক আইন প্রণয়নের ওপর জোর দেয় এবং এ লক্ষ্যে ওই বছরই দেশটির কান্দাহার প্রদেশ পুরো দখল করে নেয়। একইসঙ্গে দলটি জোট সরকার গঠনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং ১৯৯৫ সালে কাবুলের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে।

১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের সেনা সমর্থন ও সৌদি আরবের আর্থিক সহায়তায় কাবুল দখল করে নেয় তালেবান এবং তারা 'ইসলামিক এমিরাত অফ আফগানিস্তান' গঠন করে। এ সময় তারা আফগান নারীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া এমনকি পুরুষ সদস্য ব্যতীত ঘরের বাইরে বের হওয়ার মতো বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে দেশটির বিভিন্ন অংশে ১৫টি গণহত্যার ঘটনা ঘটে বলে ওই সময় জাতিসংঘ থেকে দাবি করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনার সূত্র দিয়ে জাতিসংঘ জানায়, আরব যোদ্ধারা বড় ছুরি দিয়ে গলা কেটে ও চামড়া ছিলে মানুষ হত্যা করতো এবং তাদের লক্ষ্য ছিলো মূলত শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে শুধু তালেবান নয়, ওই সময় ওসামা বিন লাদেন গঠিত আল-কায়েদা দলটিও এসব কাজে যুক্ত ছিলো বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবেই দেশটিতে কঠোর শরিয়াহ আইনের নামে এক অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি করে এসব জঙ্গি গোষ্ঠী।

২০০১ সালের মধ্যে দেশটির প্রায় ৯০ শতাংশ দখল করে নেয় তালেবান। এ সময় তালেবানদের সাথে ছিলো ২৮ থেকে ৩০ হাজার পাকিস্তানি (অধিকাংশ পশতুন) এবং দুই থেকে তিন হাজার আল-কায়েদা যোদ্ধা। পাকিস্তানিদের বেশিরভাগই ছিলো মাদ্রাসা ছাত্র।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর (৯/১১ নামে পরিচিত) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ারে বিমান হামলা ঘটে। ওই ঘটনার আগ পর্যন্ত আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রভাব ছিলো না। তবে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ওসামা বিন লাদেন ও তার দল আল-কায়েদাকে নিয়ে চিন্তিত ছিলো এবং বিন লাদেনকে তাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য তালেবান দলের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলো। কিন্তু তাদের কাছে বিন লাদেনের অবস্থানের তথ্য নেই বলে বরাবরই আফগানিস্তানের তৎকালীন তালেবান সরকার দাবি করে এসেছে।

২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ (জুনিয়র) এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আফগানিস্তানে আনুষ্ঠানিকভাবে হামলা চালায়। 'Operation Enduring Freedom' নামে পরিচালিত ওই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিলো :

   ১. ৯/১১-এর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নেওয়া
   ২. বিন লাদেনকে আটক করা
   ৩. তালেবানকে উৎখাত (কারণ তাদের মদদেই আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থান ও অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর মতো ঘটনা ঘটছিলো বলে যুক্তরাষ্ট্রের দাবি)

২০০১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই ইংল্যান্ডের সঙ্গে জোট গঠন করে পরিচালিত এ হামলার মধ্য দিয়ে তালেবানদের উৎখাতে সমর্থ হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে তারা আফগানিস্তানের বড় শহরগুলোর কাছে সেনা ঘাঁটি তৈরি করে। তবে এ হামলার মধ্যেই বহু তালেবান ও আল-কায়েদা বিদ্রোহী পাশের দেশ পাকিস্তানের পাহাড়ি এলাকায় গা-ঢাকা দেয়।

২০০১ সালের ডিসেম্বরেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ International Security Assistance Force (ISAF) গঠন করে, যাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো সন্ত্রাস দমনে ও সন্ত্রাসীদের আটকে দেশটিতে বিদেশি সেনা হামলা চালানো এবং আফগান জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া।

২০০৩ সালে ন্যাটো বাহিনীও ওই মিশনে যোগ দেয়। একইসময় হামিদ কারজাইকে দেশটির অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০০৪ সালে আফগানিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে কারজাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

২০০১ থেকে ২০১০ সাল, দীর্ঘ ১০ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক জোট ও তালেবানসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অব্যাহত পাল্টাপাল্টি হামলায় শুধু পশ্চিমা বিশ্বের সেনা ও তালেবান কিংবা আল-কায়েদা যোদ্ধাই নয়, নিরীহ আফগান জনগণের ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ব্যয় হয় কোটি কোটি মার্কিন ডলার।

২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবাটোবাদে US Navy Seal-এর নেতৃত্বে 'Operation Neptune Spear' সাঙ্কেতিক নামে পরিচালিত হামলায় আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু হয় বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র।

২০১১ সালের শেষেই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আফগানিস্তান থেকে ধীরে ধীরে সৈন্য কমিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী ওই বছরই ১০ হাজার এবং ২০১২ সালের গ্রীষ্মে আরও ২৩ হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে এর পরই আরও ৮০ হাজার মার্কিন সেনা ওই সময় দেশটিতে মোতায়েন ছিলো।

২০১১-১২ সালের বিভিন্ন সময়ে এরই ধারাবাহিকতায় ক্রমান্বয়ে কানাডা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, বেলজিয়াম তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। একইসঙ্গে আফগান জাতীয় সেনা দলের কাছে ধীরে ধীরে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ জোট বাহিনী।

২০১৩ সালের ১৮ জুন আফগান সরকারের হাতে পূর্ণ নিরাপত্তা দায়িত্ব হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর, দীর্ঘ এ যুদ্ধের ১৩ বছর পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানে তাদের সেনা অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে। একইসঙ্গে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র যথাক্রমে তাদের বাস্তিয়ন ও লেদারনেক ঘাঁটি আফগান সরকারের হাতে হস্তান্তর করে।

২০১৪ সালের মে মাসে বারাক ওবামা সরকার থেকে আফগানিস্তানে সেনা অভিযান সমাপ্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর ন্যাটো থেকে এবং ২০১৫ সালের মার্চে যুক্তরাজ্য থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সেনার উপস্থিতির কথা বলা হয়, যাদের উদ্দেশ্য আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া বলে জানানো হয়। তবে ২০১৪ সাল থেকে ধীরে ধীরে পশ্চিমা সেনা অভিযান কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিতে বাড়তে থাকে তালেবানের হামলা। বিশেষ করে ওই সময় ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা। তালেবানের এ আধিপত্য কমাতে ২০১৫ সালে আফগান সরকারের সহযোগিতায় দেশটিতে বিমান হামলা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে ওই বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা বাতিল করে বরং তালেবান দমনে তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সরকারকে সহযোগিতার নতুন ঘোষণা দেয় দেশটি।

২০১৬ সালে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে তা ভেস্তে যায়।

২০১৭ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তানে আবারও মার্কিন সেনা উপস্থিতির সময় বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও সময়টা কতদিন পর্যন্ত, তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তালেবানদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা শান্তি আলোচনা শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সাতদিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় উভয় পক্ষ।

২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারের রাজধানী দোহায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে শর্তসাপেক্ষে একটি শান্তি চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়। এতে পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে বন্দি বিনিময় ও ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের শর্ত দেয় তালেবানরা। তবে আফগান সরকারকে অবহিত না করেই এ চুক্তির খসড়া করা হয়েছে এবং এসব শর্ত মানা বা না মানা যুক্তরাষ্ট্র নয় বরং আফগান সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে তা খারিজ করে দেয় আশরাফ ঘানির সরকার। ২০২০ সালের ২ মে শেষ পর্যন্ত এ শান্তি চুক্তির আওতায়ই কাবুলের কারাগার থেকে ১০০ তালেবান বন্দিকে মুক্তি দেয় আফগান সরকার। পরে আরও ১৫০০ জঙ্গি মুক্তির ব্যাপারেও সম্মত হয় দেশটি।

২০২১ সালে এসে তালেবানের হামলা বেড়ে যেতে থাকে। মূলত নবনির্বাচিত মার্কিন প্রসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটি থেকে সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই দলটি একে একে আফগানিস্তানের সব প্রদেশ খুব সহজে এবং অনেকটা বিনা বাধায় তাদের দখলে নিতে থাকে। এ বছরের ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখলের পর যুদ্ধ সমাপ্তির ঘোষণা দেয় তালেবান যোদ্ধারা। একইসঙ্গে ৩১ আগস্টের মধ্যে দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশি সেনাদের দেশ ছেড়ে যাওয়ারও আদেশ জারি করে। ৩১ আগস্ট সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ ২০ বছরের সেনা অভিযানের।

তথ্যসূত্র :

https://www.cfr.org/timeline/us-war-afghanistan
https://en.wikipedia.org/wiki/War_in_Afghanistan_(2001%E2%80%932021)
https://en.wikipedia.org/wiki/History_of_the_War_in_Afghanistan_(2001%E2%80%932021)#2013:_Withdrawal
https://www.bbc.com/news/world-asia-49192495
https://www.bbc.com/news/world-47391821
https://www.aljazeera.com/tag/taliban/
https://www.aljazeera.com/where/afghanistan/
https://www.npr.org/2021/08/30/1032656612/taliban-afghanistan-american-forces-withdrawal
https://www.npr.org/2021/08/19/1028472005/afghanistan-conflict-timeline
https://www.whitehouse.gov/briefing-room/speeches-remarks/2021/08/31/remarks-by-president-biden-on-the-end-of-the-war-in-afghanistan/
https://www.theguardian.com/politics/2021/sep/01/dominic-raab-uk-intelligence-said-kabul-unlikely-to-fall-this-year
https://www.theguardian.com/commentisfree/2021/aug/31/afghanistan-iran-uae-qatar-saudi-arabia

নুসরাত জাহান : সম্পাদক, টক অব দ্য টাইম ডট কম।