By সজীব সরকার
আর্ট অব লিভিং : শুরুটা করবো কীভাবে?
Media School September 2, 2025

মেডিটেশন করে মানসিক চাপ কমানো যেতে পারে। প্রতীকী ছবি।
আর্ট অব লিভিং মানে হলো আসলে আর্ট অব বেটার (better) লিভিং। অর্থাৎ, সবসময় যেভাবে জীবনযাপন করে আসছি, তার মধ্যে গুণগত ও দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটানো।
তবে, মনে রাখতে হবে, এর সঙ্গে টাকা-পয়সা বা বস্তুগত বিষয়গুলোর সরাসরি বা বড় কোনো সম্পর্ক নেই; সেগুলো মূলত লিভিং স্ট্যাটাস (living status)-এর সঙ্গে বেশি প্রাসঙ্গিক।
তাহলে প্রশ্ন হলো- আর্ট অব লিভিং বা বেটার লিভিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা কোন বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নেবো?
শারীরিক, মানসিক বা সামাজিকভাবে ভালো থাকতে আমরা মূলত এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে পারি :
স্ট্রেস কমিয়ে আনা : মানসিক, আবেগীয় ও শারীরিক চাপ যতোটা সম্ভব কমিয়ে আনা। ব্রিদিং এক্সারসাইজ, ইয়োগা, অ্যারোবিকস বা অন্য ধরনের ব্যায়াম, মেডিটেশন, ফোকাস ঠিক রাখা, অহেতুক টেনশনের হার ক্রমশ কমিয়ে আনা, মানসিক প্রশান্তির জন্য দরকারি ব্যবস্থা নেওয়া - এসব উপায় অনুসরণ করে নিজেকে সবসময় শান্ত ও স্থির রাখার চেষ্টা করলে স্ট্রেস কমতে থাকবে।
শৃঙ্খলা মেনে চলা : শৃঙ্খলা মানে কিন্তু কঠিন রুটিন মেনে জীবনযাপন করা নয়; এর মানে হলো খুব এলোমেলোভাবে জীবনযাপন না করা। নিজের জন্য ক্ষতিকর অভ্যাস বা কাজগুলো অনবরত করতে না থাকা, সবসময় সব কাজে অহেতুক সময় নষ্ট না করে বরং সময়ের কাজ সময়মতো করে ফেলা, জরুরি কাজ ফেলে না রাখা, ঘুম-খাওয়া-বিশ্রাম-পড়াশোনা-গল্প-আড্ডা ইত্যাদির স্বাভাবিক নিয়মগুলো যথাসম্ভব মেনে চলা - এই সাধারণ বিষয়গুলোই জীবনে শৃঙ্খলা আনে। এতে শারীরিক-মানসিক ভারসাম্য ও সুস্থতা বজায় রাখা সহজ হয়।
ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখা : সবকিছুতে সন্দেহ, অবিশ্বাস বা খুঁত ধরার প্রবণতা নিজের মানসিক শান্তি নষ্ট করে। অহেতুক সন্দেহবাতিকতা মানুষের সম্পর্কগুলোর মধ্যেও ভাঙ্গন ধরায়। যাচাই না করে আগেই নিজের মতো করে খারাপটা ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। এগুলো নিজের শান্তি যেমন নষ্ট করে, তেমনি আশেপাশের মানুষদের জীবনকেও দুবির্ষহ করে তোলে। তাই, সার্বিকভাবে জীবন ও জগৎ সম্বন্ধে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখা দরকার।
আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (emotional intelligence) বাড়ানো : আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে পারলে নিজের মধ্যে নেতিবাচক আবেগগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। আবেগের বশে ভুল বা ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত নেওয়া বা এমন কোনো আচরণ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা যায়। অন্যের আবেগগুলো সহজে বোঝা ও মূল্যায়ন করা যায় যা সম্পর্কের উন্নতির জন্য খুব জরুরি।
ইগো (ego)-কে সামাল দেওয়া : ছোটখাট অনেক বিষয়েই হয়তো আমরা মন খারাপ করি, ঈর্ষাকাতর হই কিংবা অপমানিত বোধ করি। বিদ্বেষ তৈরি হয় মনের ভেতর। যেসব বিষয় দীর্ঘমেয়াদি নয়, কিংবা, দীর্ঘমেয়াদে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেগুলো নিয়ে অনেক বেশি বিচলিত হয়ে আসলে আমাদের ক্ষতি ছাড়া লাভ কিছুই হবে না। ছোটখাট বিষয়ে সামান্য মতবিরোধ কিংবা মতের ভিন্নতা, রাগান্বিত অবস্থায় কারো বলা একটা কটু কথা দিনের পর দিন মনের মধ্যে পুষে রাখা - এগুলো ভালো কিছু বয়ে আনে না। এসব বিষয় খুব সিরিয়াসলি না নিয়ে পরিস্থিতি বুঝে তা উপেক্ষা করা বা নিজেই উদ্যোগী হয়ে বিষয়গুলো সামলে নেওয়া বরং ভালো। বড় কোনো ইস্যু হলে রাগারাগি না করে কিংবা মনের মধ্যে বিদ্বেষ পুষে না রেখে একসাথে বসে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে তা ঠিক করে নেওয়া দরকার। এতে যেমন নিজের মানসিক প্রশান্তি বিনষ্ট হয় না, তেমনি বিরূপ পরিস্থিতিও সহজেই অনুকূলে চলে আসে। ফলে, আশেপাশের মানুষদের নিয়ে ভালো থাকা যায়। মনে রাখতে হবে, সবকিছুকে খুব 'পারসোনালি' নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আর, অন্তত ছোটখাট ইস্যুতে মানুষকে ক্ষমা করতে পারাটা কেবল উদারতার পরিচয়ই নয়, মানসিক প্রশান্তির জন্য খুব দরকারি বিষয়ও।
প্রযুক্তির ব্যবহার ও ব্যস্ততা থেকে বিরতি নেওয়া : প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সব ধরনের প্রযুক্তির (মোবাইল ফোন, টিভি, কম্পিউটার ইত্যাদি) ব্যবহার বন্ধ রাখুন। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন। ওই সময়টিতে প্রকৃতির সান্নিধ্যলাভের চেষ্টা করুন। যেমন : বাগান করুন, গাছের পরিচর্যা করুন। বারান্দায় বা ছাদে গিয়ে আকাশ দেখুন। পাখির ডাক শুনুন। বৃষ্টি উপভোগ করুন; মনোযোগ দিয়ে বৃষ্টি দেখুন, বৃষ্টির শব্দ শুনুন, বৃষ্টির ভেজা গন্ধ নিন এবং হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি স্পর্শ করুন। বৃষ্টিতে পাখিদের ভিজে যাওয়া এবং ডানা ঝাপটে আবার পানি ঝেড়ে ফেলা উপভোগ করুন। এই ছোট অভ্যাসগুলোও আপনার মনের চাপ কমিয়ে শান্তি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।
নিজেকে ভালোবাসা : নিজেকে ভালোবাসতে হবে এবং নিজের যত্ন নিতে হবে। নিজেকে ভালোবাসা মানেই 'স্বার্থপর' হওয়া নয়; বরং, নিজের শারীরিক-মানসিক-আবেগীয় স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিলে আপনি ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আর, নিজের সুস্থতা কেবল নিজের জন্যই নয়- আশেপাশের মানুষদের নিয়ে ভালো থাকার জন্যও জরুরি। অকারণ নিজেকে ক্ষুদ্র মনে না করা, নিজের ওপর বিশ্বাস না হারানো - এগুলো খুব জরুরি বিষয়। তাই, সম্ভব হলে প্রতিদিনই একটু সময় শুধু নিজের জন্য বরাদ্দ করুন। ওই সময়ে নিজের মতো সময় কাটান। নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়াগুলো সেরে নিন। নিজের যত্ন নিন। নিজের চা বা কফিটা নিজেই বানিয়ে নিন। দেখবেন, ভালো লাগছে।
এই বিষয়গুলো দিয়ে অন্তত শুরুটা করা যায়। এর পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ও চর্চার মধ্যে আনতে হবে।