Media School

Dhaka    Thursday, 28 March 2024

By সজীব সরকার

উল্টো পিরামিড কাঠামো

Media School July 17, 2020

উল্টো পিরামিড কাঠামো

একটি পিরামিড উল্টে দিলে যেমন দেখা যাবে, এই কাঠামোটির ধারণাগত চিত্রটিও দেখতে ঠিক তেমন। একটি পিরামিডের সবচেয়ে ভারী ও গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো এর ভিত্তি যা পিরামিডের নিচের অংশে থাকে। এই ভিত্তির ওপরই পিরামিডটি দাঁড়িয়ে থাকে। পিরামিডটি উল্টে দিলে এর গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশস্ত অংশটি ওপরে চলে আসবে এবং কম গুরুত্বপূর্ণ ও সরু অংশটি নিচে নেমে যাবে। এই কাঠামোতে সংবাদ লেখার সময় সংবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো একেবারে ওপরে শুরুতে (ইন্ট্রো) দেয়া হয়; ফলে ধারণাগতভাবে পিরামিডের সঙ্গে তুলনা করলে সংবাদের ভারী ও প্রশস্ত অংশটুকু সংবাদের একেবারে ওপরে থাকে আর অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো (ধারণাগতভাবে সংবাদের ‘সরু’ অংশ) সংবাদের পরের অংশে অর্থাৎ নিচে থাকে।

ওপরে দেখানো চিত্রে উল্টো পিরামিডটির মূল অর্থাৎ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশে লিড বা ইন্ট্রো-এর অবস্থান দেখা যাচ্ছে। ইন্ট্রোতে ‘ষড়-ক’-এর ৬টি প্রশ্নের (কে, কী, কখন, কেন, কোথায় ও কীভাবে) মধ্যে সবচেয়ে জরুরি প্রশ্নগুলোর উত্তর পাঠকের সামনে তুলে ধরা হয়। পরের অংশে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো গুরুত্বের ক্রমান্বয়ে সংবাদের বডি-তে তুলে ধরা হয়। এখানে যা বোঝানো হচ্ছে : এ কাঠামোতে সংবাদ লেখার সময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সবার আগে দিতে হবে। এর পর বেশি থেকে অল্প গুরুত্বের ক্রমানুসারে অন্যান্য তথ্য দিতে হবে।

মূল কথা হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে লিড বা ইন্ট্রো লেখার পর বেশি গুরুত্বপূর্ণ থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য একের পর এক লিখে যেতে হবে। দরকারি সবগুলো তথ্য দিতে স্টোরিতে যতোগুলো অনুচ্ছেদ দরকার পড়ে, দিতে হবে; এর কোনো বাঁধা-ধরা নিয়ম নেই। তবে, প্রতিটি নতুন তথ্য একেকটি নতুন অনুচ্ছেদে দিতে পারলে ভালো হয়। অনলাইন সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে এ নিয়ম বেশি মানা হয়।

উল্টো পিরামিড কাঠামোর সুবিধা
অনেক ধরনের সুবিধা দেয়ার কারণেই সংবাদ লেখার ক্ষেত্রে এই কাঠামোর ব্যবহার এত বেশি। এসব সুবিধার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো :

  • এ কাঠামোয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি আগেই বলে দেয়া হয়। ফলে শত ব্যস্ততার মধ্যেও পাঠক শুধু ইন্ট্রো-তে চোখ বুলিয়েই ঘটনাটি সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়ে যেতে পারে।
  • গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো প্রথমেই থাকায় সংবাদের পরের অংশ না পড়লেও পাঠকের তেমন কোনো সমস্যা বা একটি ঘটনা সম্পর্কে জানায় তেমন বড় কোনো ঘাটতি থাকে না।
  • পত্রিকায় পৃষ্ঠাসজ্জার ক্ষেত্রে এ কাঠামো অনেক সুবিধা দেয়; স্থান সঙ্কুলান না হলে বাড়তি সময় খরচ না করে নিচের কম গুরুত্বপূর্ণ অংশ না পড়েও কিছুটা ফেলে দেয়া যায়।
  • পৃষ্ঠাসজ্জার সময় প্রায়ই শিরোনামটি বদলানোর প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু ওই অল্প সময়ে পুরো সংবাদ পড়ে শিরোনামের ধারণা নেয়ার উপায় থাকে না। এ অবস্থায় উল্টো পিরামিড কাঠামোতে লেখা কোনো সংবাদের শুধু ইন্ট্রো পড়েই শিরোনাম নতুন করে লেখা যায়।

উল্টো পিরামিড কাঠামোর অসুবিধা
এ কাঠামোয় সংবাদ লেখার অনেক সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন :

  • প্রথমেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে দিলে পাঠক আর পরের অংশ পড়তে আগ্রহী না-ও হতে পারে; এতে পুরো সংবাদ লেখার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়।
  • এ কাঠামোয় সংবাদ লেখার সময় ভাষাগত কোনো সৃজনশীলতার তেমন কোনো সুযোগ থাকে না।
  • এ কাঠামোয় লেখার ফলে সব সংবাদের গঠন ও চেহারা প্রায় অভিন্ন হয়ে থাকে। এতে পাঠকের মনে একঘেঁয়েমি চলে আসার আশঙ্কা থাকে।

যেভাবে উল্টো পিরামিড কাঠামোর উৎপত্তি
যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ চলাকালে উল্টো পিরামিড কাঠামোর সূচনা হয়। ওই সময় টেলিগ্রাফের মাধ্যমে সে সময়কার চলমান ঘটনার খবর পাঠানো হলে প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে কাগজে লেখা খবরের নিচের অংশের তথ্য অনেক সময় যথাস্থান পর্যন্ত না পৌঁছার আশঙ্কা থাকতো। তাই তখন রাজনৈতিক পরিস্থিতির খবর লিখে পাঠাতে সংবাদ লেখার সময় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো আগে লেখা হতো। ক্রমেই এটি বিশেষ করে হার্ড নিউজ লেখার জন্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর ও তাই বেশি জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত কাঠামোতে রূপ নেয়। বহুবিধ সুবিধার কারণে এটি ক্রমেই সংবাদ লেখার জন্যে সবচাইতে আদর্শ কাঠামো হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।