Media School

Dhaka    Sunday, 28 April 2024

By সজীব সরকার

ক্রিটিক্যাল থিংকিং কী?

Media School March 8, 2024

ক্রিটিক্যাল থিংকিং-এ ভাবনা-চিন্তার প্রক্রিয়ার মধ্যে সমালোচনা ও বিশ্লেষণ থাকা জরুরি। প্রতীকী ছবি।

খুব সহজ করে বলতে গেলে, ক্রিটিক্যাল থিংকিং মানে হলো কোনো বিষয় নিয়ে বিক্ষিপ্ত বা এলোমেলোভাবে না ভেবে সুশৃঙ্খলভাবে ভাবা। নিছক আবেগ দিয়ে কোনো বিষয়কে বিচার বিশ্লেষণ না করে যুক্তি-তর্ক-বিশ্লেষণের বাটখারা দিয়ে যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। কোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করা। কোনো যুক্তি ছাড়া একটি সিদ্ধান্ত না নিয়ে প্রাসঙ্গিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে আসা।

একটি বিষয়ে ভাবতে বা সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় আমরা শুধু নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ, পক্ষপাত বা পূর্ব-অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করি। অনেক সময়, ওই বিষয়ে সহজে যে তথ্য বা যতোটা তথ্য স্মরণ করতে পারি, শুধু তা দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করি। এ ধরনের চিন্তার প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। কেননা, সঠিক পদ্ধতিতে বা নির্ভরযোগ্য পদ্ধতিতে চিন্তার প্রক্রিয়ায় যেসব শর্ত বা উপাদান থাকে, তা এমন প্রথাগত চিন্তার প্রক্রিয়ায় থাকে না। এতে, দৈনন্দিন অভ্যাসবশত সাধারণ যে চিন্তার প্রক্রিয়ার ওপর আমরা নির্ভর করি, তা আসলে নিশ্চিতভাবে নির্ভরযোগ্য প্রক্রিয়া নয়।

ক্রিটিক্যাল থিংকিং হতে হলে ভাবনা-চিন্তার প্রক্রিয়ার মধ্যে সমালোচনা ও বিশ্লেষণ থাকা জরুরি।

সমালোচনা মানে 'সম্যক আলোচনা', পরিপূর্ণ আলোচনা - খণ্ডিত বা আংশিক নয়। অর্থাৎ, একটি বিষয় নিয়ে যখন ভাবছি, তখন সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসার আগে নিশ্চিত করতে হবে, ওই বিষয়ের সম্ভাব্য সব দিক নিয়েই ভাবছি কি না। যেমন : সোশ্যাল মিডিয়া ভালো বা মন্দ - এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসতে চাই। তাহলে, এর ভালো ও মন্দ - উভয় দিক সমানভাবে যাচাই করা দরকার। একইভাবে, একজন ব্যক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও মানুষ হিসেবে তার সবগুলো দিক বা বৈশিষ্ট্য ভালো করে বিবেচনা করে নিতে হবে। তার চরিত্র বা বৈশিষ্ট্যের কিছু দিক বিবেচনা করলাম আর অন্য অনেককিছুই বিবেচনায় নিলাম না - এমন হলে ওই ব্যক্তির ব্যাপারে নেওয়া সিদ্ধান্ত সঠিক বা নির্ভরযোগ্য হবে কি?

বিশ্লেষণ ছাড়া ক্রিটিক্যাল থিংকিং হতে পারে না। একটি বিষয়ে কিছু তথ্য যোগাড় করেই তো আর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা ঠিক নয়; তথ্যগুলোর ভালো-মন্দ, বিশ্বাসযোগ্যতা বা প্রাসঙ্গিকতা যাচাই করাও জরুরি।

ধরা যাক, আমার একটি মোবাইল ফোন দরকার। কোনটা ভালো হবে বা কোন ব্র্যান্ডের কিনবো - এই খোঁজখবর তাহলে ঠিকমতো নিয়ে যাওয়া দরকার। এক বন্ধু আমাকে বললো একটি নির্দিষ্ট ফোন 'ভালো' বলে জানালো। আমার কি ওই ফোনটিই কিনে ফেলা ঠিক হবে? অথবা, তিনজন ব্যক্তি ভিন্ন তিনটি ব্র্যান্ডের বা মডেলের ফোনের কথা বললো। তখন কোনটি কিনবো- কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবো?

আমাকে প্রথমেই 'ভালো ফোন' কথাটির অর্থ বোঝার চেষ্টা করতে হবে। দেখতে হবে, 'ভালো' বলতে কোন ব্যক্তি ঠিক কী বোঝাচ্ছে। একজনের বাতিক হলো ছবি তোলা; তাহলে তার কাছে 'ভালো ফোন' মানে হতে পারে ক্যামেরা ভালো, এমন ফোন। মোবাইল গেইমে আসক্ত ব্যক্তির কাছে ভালো ফোন ভিন্ন ব্যাপার। ফোনের ডিউরেবিলিটি বা লংজিভিটি যার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সে বলবে ভিন্ন কথা। অনেকের কাছে হাই-টেক কিংবা দামি ফোন মানে ভালো ফোন।

তাহলে, শুরুতেই আমাকে ভাবতে হবে, আমি কেমন ফোন চাই। অন্যদের দেওয়া পরামর্শগুলো তাহলে আমার চাহিদা, প্রয়োজন ও বাজেটের সাথে কতোটা প্রাসঙ্গিক। পাশাপাশি দেখতে হবে, পরামর্শগুলো যে দিচ্ছে, এ বিষয়ে তার জানাশোনা কতোটা।

ক্রিটিক্যালি ভাবতে হলে কী করে ভাবছি, কীসের ভিত্তিতে ভাবছি- এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি। যে তথ্য বা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভাবছি বা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, তা কতোটা নির্ভরযোগ্য এবং বিষয়টি নিয়ে সার্বিকভাবে বিবেচনা করছি কি না, এ প্রশ্ন নিজেকে করতে হবে। ভাবনা-চিন্তার মধ্যে কোনো ভুল ধারণা বা পক্ষপাত কাজ করছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে।

সার্বিকভাবে বলা যেতে পারে, ক্রিটিক্যালি ভাবতে পারার মানে হলো কোনো বিষয়ে ভাবার সময় পক্ষপাত এড়িয়ে ভাবতে পারা এবং অপ্রাসঙ্গিক আবেগ বা যুক্তি বর্জন করে সঠিক ও প্রাসঙ্গিক যুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে পারা।