Media School

Dhaka    Wednesday, 24 April 2024

By সজীব সরকার

নিউজ বনাম ফেক নিউজ

Media School June 16, 2020

ছবি : বিবিসি

সম্প্রতি ‘ফেক নিউজ’ বলে একটি অভিধা বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছে। প্রত্যয়টি থেকেই বোঝা যাচ্ছে, ‘ফেক নিউজ’ আসলে কোনো নিউজ নয়; কেননা আগের আলোচনা থেকেই এটি স্পষ্ট : ফেক তথা মিথ্যা বা ভুয়া কোনো তথ্য সংবাদ হতে পারে না; সংবাদ হতে হলে এর মধ্যে সত্যতা থাকতেই হবে।

তবে এ ধরনের (মিথ্যা) সংবাদকে এমনভাবে পাঠকের সামনে হাজির করা হয় যেন তারা এটিকে সত্যিকার সংবাদ মনে করে। তাত্ত্বিকরা ফেক নিউজকে ‘হলুদ সাংবাদিকতা’র (yellow journalism) সঙ্গে তুলনা করেন যেখানে মূলত সত্য বলতে কিছু থাকে না বা থাকলেও তা নগণ্য কিন্তু একে বহুগুণ বাড়িয়ে, ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে পাঠকের সামনে হাজির করা হয়। অনেকে একে ভুল তথ্যের মাধ্যমে প্রচারণা (propaganda) হিসেবেও অভিহিত করেছেন।

ফেক নিউজের নানা ধরন

ভুল ও মিথ্যা তথ্য নিয়ে সচেতনতামূলক কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান First Draft News-এর গবেষক ক্লেয়ার ওয়ার্ডল (Claire Wardle) ৭ ধরনের ফেক নিউজের কথা উল্লেখ করেছেন :

১. ব্যঙ্গ বা বিদ্রুপ (satire or parody) : এ ধরনের ফেক নিউজ কোনো ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয় না; মূলত মানুষকে ‘বোকা বানানোই’ এর উদ্দেশ্য।

২. মিথ্যা সংযোগ (false connection) : হেডলাইনে এক কথা বলা হয় কিন্তু ভেতরে একেবারেই ভিন্ন কথা; অর্থাৎ এক ধরনের প্রতারণা।

৩. ভুল পথে চালিত করা তথ্য (misleading content) : এ ধরনের ফেক নিউজ কোনো তথ্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে বা পাঠককে ভুল পথে চালিত করে; তথ্যের সঠিক গতি-নির্দেশ পাঠক বুঝতে পারে না। এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তথ্যের ভুল ব্যবহার।

৪. ভুল প্রসঙ্গ (false context) : এ ধরনের ফেক নিউজ হলো সঠিক তথ্য পূর্বাপর সম্পর্ক ছাড়া ভুল প্রসঙ্গে ব্যবহার করে পাঠকের সামনে হাজির করা।

৫. পাকা সূত্রের বরাতে ভুয়া তথ্য (impostor content) : সত্যিকার ও বিশ্বস্ত সূত্রকে উৎস হিসেবে উল্লেখ করে মিথ্যা, ভুয়া বা মনগড়া তথ্য প্রচার করা।

৬. বিকৃত তথ্য (manipulated content) : সত্য তথ্যকে বিকৃত করে উপস্থাপন।

৭. বানোয়াট তথ্য (fabricated content) : শতভাগ মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য; এর উদ্দেশ্য হলো প্রতারণা ও ক্ষতি সাধন করা।

ফেক নিউজ প্রতিরোধের কৌশল

ফেক নিউজ প্রায়ই পাঠকের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ বিষয়ে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের বিদ্যমান নীতিমালা মেনে চলাকে নানাভাবে উৎসাহিত করার পাশাপাশি এ ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচতে পাঠককে নানা ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। International Federation of Library Associations and Institutions (IFLA) ফেক নিউজ শনাক্ত করতে পাঠকদের এই ৮টি পরামর্শ দিয়েছে :

১. তথ্যের উৎস বা সূত্র বিবেচনা করুন; কী উদ্দেশ্যে এটি প্রকাশিত হলো তা বোঝার চেষ্টা করুন (consider the source: to understand its mission and purpose)

২. কেবল শিরোনম নয়, পুরো সংবাদটি পড়ে দেখুন (read beyond the headline: to understand the whole story)

৩. তথ্যের উৎস (লেখক বা রিপোর্টার) যাচাই করে দেখুন তা বিশ্বাসযোগ্য কি না (check the authors: to see if they are real and credible)

৪. প্রাসঙ্গিক অন্যান্য সূত্র যাচাই করুন (assess the supporting sources: to ensure they support the claims)

৫. তথ্য প্রকাশের দিন-তারিখ-সময় যাচাই করে দেখুন এটি এখনো প্রাসঙ্গিক কি না (check the date of publication: to see if the story is relevant and up to date)

৬. এটি নিছক কোনো ঠাট্টা, মজা বা রসিকতা কি না তা জানার চেষ্টা করুন (ask if it is a joke: to determine if it is meant to be satire)

৭. আপনার নিজের মতামতের ওপর এর প্রভাব বিবেচনা করুন (review your own biases: to see if they are affecting your judgement)

৮. নিশ্চিত হওয়ার জন্যে এ বিষয়ে যিনি ভালো জানেন, এমন কারো সাহায্য নিন (ask experts: to get confirmation from independent people with knowledge)

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি (IFLA) একটি পোস্টার প্রকাশ করে; পাঠকের সুবিধার্থে বইটির শেষে সংযোজনীতে তা তুলে ধরা হলো।

সুপ্রাচীন কাল থেকেই ফেক নিউজের চর্চা নানাভাবে হয়ে আসছে। তবে সমালোচকরা বলেন, অনলাইনভিত্তিক নানা মিডিয়া এবং বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) মাধ্যমে ফেক নিউজের দৌরাত্ম্য বেড়েছে বহু গুণ। অনলাইন মিডিয়ায় ফেক নিউজ প্রচারের বিশেষ একটি কৌশল রয়েছে; ওয়েবের কোনো একটি পাতায় খুব আকর্ষক একটি টেক্সট বা ছবি কিংবা গ্রাফিক্স থাকে যাতে আকৃষ্ট হয়ে পাঠক ওই অংশে ‘ক্লিক’ করে; পাঠক সেখানে ক্লিক করার পর অন্য একটি পাতা উন্মুক্ত হয় (উদ্দিষ্ট লিংক)। এটি ‘clickbait’ কৌশল নামে পরিচিত।