Media School

Dhaka    Wednesday, 24 April 2024

By তানহা মিম

নিজের ইচ্ছাশক্তিকে দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না

Media School October 21, 2020

তানহা মিম : শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি।

'নারী' বলতে পৃথিবীর অন্যতম প্রাণী মানুষের স্ত্রী-বাচকতা নির্দেশক রূপটিকে বোঝানো হয়েছে। হ্যাঁ, আমি একজন নারী। শারীরিকভাবে সন্তান জন্মদানের সক্ষমতার কারণে আমাকে নারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

একজন নারী হিসেবে আমার পথচলাটা কঠিন। কিন্তু সকল বাধা-প্রতিকূলতা পার করে আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। নরসিংদীর  মতো মফস্বল শহরের মেয়ে আমি; সামাজিক প্রতিবন্ধকতা পার করে ব্যস্ত শহর ঢাকায় পাড়ি জমানোটা যেন অনেকটা যুদ্ধজয়ীর মতোই। আর এই সবকিছুর মাঝে আমার একমাত্র শক্তি ছিল লেখাপড়া। অচেনা শহরে নিজ ব্যয় বহন করার জন্য টিউশনি খোঁজা, চাকরি করা ইত্যাদি সব প্রচেষ্টাই করে চলেছি রোজ।

নারীদেহের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি - হোক সেটা কাছের মানুষ অথবা দূরের - এই অভিজ্ঞতা কম-বেশি সবারই আছে। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম কিছু মিলেনি। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় নজরে পড়ে যাই আব্বুর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছেলের। সেই দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম হয়ে আসা আমার স্কুলযাত্রা শেষ হয়ে যায় দশম শ্রেণিতে এসেই। ডাক্তার হবার স্বপ্ন সেখানেই ইতি টানল। লুকিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সময় পার হবার সাথে সাথে বদলে গেল অনেক কিছুই। বাবার আকস্মিক মৃত্যু, চোখের সামনে একটা সচ্ছ্বল পরিবারের একটু একটু করে ভেঙ্গে পড়া - সবই যেন অল্প সময়ের মধ্যেই হয়ে গেল। ২০১৪ সাল থেকে নতুনভাবে আবার যাত্রা শুরু করলাম। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর পাড়ি জমাই ঢাকায়। সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির পর ঢাকায় থাকা স্থায়ী হয়। লোকাল গার্ডিয়ান হিসেবে ছোট খালা ও খালু আছেন, কিন্তু নারী হওয়াতে সেখানেও বিপত্তি। নিজেকে বাঁচাতে ওই পরিবার থেকেও চলে আসতে বাধ্য হই। ক্ষোভগুলো নিজের মধ্যেই চেপে রেখেছি।

হয়তো জীবনটা অন্যরকম হতে পারতো। তাই বলে একপাও পিছিয়ে পড়িনি। যতোবার কাছের মানুষগুলো বাধার দেয়াল তৈরি করেছে, ততোবার নিজ স্বপ্নগুলোর দিকে একটা করে পা বাড়িয়েছি। নিজেকে স্বশিক্ষিত করার লক্ষ্যে লড়ে যাচ্ছি। কিন্তু বাস্তবতা মরীচিকার মত মিথ্যা জালে আটকে দিতে চাইছে। কেননা অর্থনৈতিক টানাপড়েন নিয়ে একজন নারী হিসেবে একা পথ চলাটা দুর্বিষহ। টিউশনির টাকায় ঢাকা শহরে চলা কঠিন। ইউনিভার্সিটির শিক্ষা সহায়ক তহবিল আর নিজ মেধার বলে পাওয়া বৃত্তির কারণে অনেকটা সহজতর হয়েছে লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়াটা। কিন্তু বাকি খরচগুলো বহন করতে হাঁপিয়ে উঠছি প্রতিনিয়ত। লেখাপড়া ও চাকরি - একসাথে দুটোই চালিয়ে নিয়ে যাওয়াটা কষ্টসাধ্য কিন্তু আমাকে যে পারতেই হবে।

আমিই পারি আমার অবস্থানকে পরিবর্তন করতে। চাকরি ছিল, এখন নেই- তাতে কী হয়েছে? তাই বলে নিজের ইচ্ছাশক্তিকে দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।