Media School

Dhaka    Friday, 17 May 2024

By সজীব সরকার

পরীক্ষার্থী নয়, বিদ্যার্থী চাই

Media School July 4, 2020

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে কাঠামোতে চলছে, তাতে আমরা দেখি, শিক্ষার্থীদের বিদ্যা অর্জনের প্রতি কোনো তাগিদ দেয়া হয় না, বরং পরীক্ষা পাসের জন্যে তাদের প্রস্তুত করার চেষ্টা চলে। আর পরীক্ষায় কেবল পাস করলেই চলে না, কে কোন গ্রেড পেলো, তা দিয়ে মাপা হয় শিক্ষার্থীর মেধা বা যোগ্যতা। জিপিএ ২ বা ৪ বা ৫... এগুলো নিছক সংখ্যা, যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়, তাতে এসব গ্রেডের মাধ্যমে কোনোভাবেই একজন ব্যক্তির মেধাকে নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা যায় না। পরীক্ষায় কী নম্বর পেলো, কোন গ্রেড পেলো, তা দিয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বা দক্ষতা যাচাই করা উচিত নয়। একেবারে কিছুই না জেনে ও না বুঝে কেবল মুখস্থ করে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। একইভাবে জীবন ও চারপাশের জগত সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান এবং প্রয়োজনীয়তা দক্ষতা থাকার পরও অত্যন্ত ক্ষুদ্র কোনো কারণেও কেউ পরীক্ষায় ভালো নম্বর না পেতে পারে।

প্রায় প্রতিবছরই আমরা দেখি, পাবলিক পরীক্ষার ফল বেরুলে কেবল জিপিএ ৫-এর সংখ্যার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আমাদের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব কষা হয়, শিক্ষার মানের প্রশ্ন এখানে উপেক্ষিত। আর এই অসুস্থ, অযৌক্তিক এবং অবৈজ্ঞানিক প্রতিযোগিতার চাপে তথাকথিত খারাপ ফল করা বা পরীক্ষায় পাস করতে না পারা শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ অপমানবোধ থেকে এবং অভিভাবকের রুদ্ররোষ থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় - এমন ঘটনাও আমরা প্রতিবছরই দেখি।

আমাদের অভিভাবকদের বোঝা উচিত, শিক্ষাজীবন অর্থাৎ পড়াশোনার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জ্ঞান অর্জন করা, বিদ্যা লাভ করা- যা একজন শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে, দেশের একজন সৎ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়ক হবে, শিক্ষার উদ্দেশ্য কেবল ‘সার্টিফিকেট’ নামের কিছু কাগজ জমানো নয়। শিক্ষাজীবনের সব পরীক্ষায় শতভাগ নম্বর পেয়ে পাস করেও একটি ছেলে বা মেয়ে যদি পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল, বাস্তব জীবনে ব্যর্থ এবং অসৎ ও ক্ষতিকর ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠে, তাহলে সেই সার্টিফিকেট ওই শিক্ষার্থী বা তার অভিভাবকের কোন কাজে আসবে? অভিভাবকদের প্রতি প্রত্যাশা থাকবে, নিজের সন্তানের শৈশব-কৈশোরের আনন্দকে নষ্ট করবেন না, তাদের পরীক্ষা বা সার্টিফিকেটের কারাগারে রুদ্ধ করবেন না, পড়াশোনাকে তেতো ঔষধ বানাবেন না যা শিক্ষার্থীদের জোর করে গেলাতে হয়। পড়াশোনাটাকে ‘অত্যাচার’ বানানো যাবে না। নিজের তাগিদে ও মনের আনন্দে পড়তে দিলেই ছেলেমেয়েরা জীবনে গুণগত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে, আতঙ্কমুক্ত ও আনন্দে পরিপূর্ণ একটি পরিবেশ তৈরি করলে শিক্ষার্থীরা এমনিতেই জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারবে - এইটুকু আস্থা সন্তানের ওপর রাখুন, তাদের পাশে থাকুন।

[লেখাটি দৈনিক আমাদের নতুন সময়-এ ১৭ মে ২০১৯ প্রকাশিত হয়।]