Media School

Dhaka    Monday, 13 October 2025

By সজীব সরকার

প্যারাসোশ্যাল রিলেশনশিপ (Parasocial Relationship)

Media School September 13, 2025

প্যারাসোশ্যাল রিলেশনশিপ হলো কোনো ব্যক্তি এবং তার সঙ্গে সরাসরি কোনো পরিচয় বা সম্পর্ক নেই - এমন দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠা একধরনের সম্পর্ক।

বিশদ ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে কয়েকটি উদাহরণ দেখে নেওয়া যাক।

ফুটবল ভক্তরা মেসি বা রোনালদোর মতো তারকা খেলোয়াড়দের পক্ষ সমর্থন করে, তাদের জার্সি সংগ্রহ করে পরে। বিশ্বকাপ বা অন্য বড় কোনো টুর্নামেন্টের সময় তাদের ছবি বা পোস্টার ফোন বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে রাখে; তাদের দেশের বা দলের পতাকা সংগ্রহ করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ছবি পোস্ট করে, নানারকম বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সালমান শাহ একটি কিংবদন্তি নাম। তার মৃত্যুর খবর জানার পর একাধিক ভক্ত আত্মহত্যা করে বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়।

প্রিন্সেস ডায়ানা, মাইকেল জ্যাকসন - তাদের মৃত্যুর খবর জানার পর সারা বিশ্বের ভক্ত-অনুরাগীরা কেঁদে বুক ভাসিয়েছে।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কিংবদন্তি চরিত্র দেবদাস ও পার্বতী; হুমায়ূন আহমেদের চরিত্র হিমু বা মিসির আলী কিংবা বাকের ভাই - তাদের সঙ্গে পাঠক-দর্শকদের একধরনের সম্পর্ক বা আত্মিক যোগসূত্র ঘটে। বিশেষ করে বলা যায়- দেবদাস ও বাকের ভাইয়ের মৃত্যুতে কাঁদেনি - এমন পাঠক বা দর্শক পাওয়া বিরল।

বনলতা সেন, বেলা বোস, নীলাঞ্জনা, রুবি রায় কিংবা বরুণা - বিখ্যাত সব কবিতা ও গানের সুবিখ্যাত এই চরিত্রগুলোর সঙ্গে কি আমাদের একধরনের পরিচিতি ও বন্ধনের বিশ্বাস গড়ে ওঠেনি?

কিংবা, গায়ক মান্না দের 'কফি হাউসের' নিখিলেষ, মইদুল, রমা রায় কিংবা অমলের সঙ্গে কি আমরা নিজেদের জীবনকে মেলাই না?

এই সবগুলো উদাহরণে কয়েকটি বিষয় উঠে আসে : একজন ব্যক্তি (পাঠক, দর্শক, ভক্ত বা অনুরাগী) অন্য একজন ব্যক্তির সঙ্গে নিজের একরকমের আত্মিক যোগ বা সম্পর্ক অনুভব করে। দ্বিতীয় ব্যক্তিটি সত্যিকার ব্যক্তি যেমন হতে পারে (যেমন : কোনো তারকা), তেমনি আবার কল্পিত কোনো চরিত্রও হতে পারে (যেমন : গল্প বা নাটকের চরিত্র)।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, প্রথম ব্যক্তি দ্বিতীয় ব্যক্তিকে চিনলে বা জানলেও এ চেনা আমরা কাছের মানুষদের মধ্যে পরস্পরকে যেভাবে চিনি বা জানি, ঠিক তেমন নয়। আবার, ওই দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথম ব্যক্তিকে একেবারেই চেনে না। ফলে, আমরা বলতে পারি, এটি একপাক্ষিক একটি সম্পর্ক।

অর্থাৎ, ওই দুই ব্যক্তির মধ্যকার সম্পর্ক আমাদের স্বাভাবিক সামাজিক সম্পর্কগুলোর মতো নয়। আবার, এ সম্পর্ককে ঠিক অস্বাভাবিক (abnormal) বা অসামাজিক (unsocial) কিংবা সমাজবিরোধী (anti-social) বলাও ভুল হবে; কারণ, এ সম্পর্ক সমাজের রীতিবিরুদ্ধ বা খুব বিরল কিছু নয়। তাই, এ ধরনের সম্পর্ককে বলা হয় প্যারাসোশ্যাল সম্পর্ক। এখানে 'প্যারা' উপসর্গটি (prefix) 'স্বাভাবিকের বাইরে' কিছু বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।

সমাজবিজ্ঞানী ডোনাল্ড হর্টন (Donald Horton) ও রিচার্ড ওহল (Richard Wohl) ১৯৫৬ সালে 'প্যারাসোশ্যাল রিলেশনশিপ' কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন। এক গবেষণায় তারা দেখান, গণমাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে অডিয়েন্সের (গণমাধ্যম ব্যবহারকারী) একধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে যা অনেকটাই আমাদের সমাজে প্রচলিত সম্পর্কগুলোর মতো। গণমাধ্যম ব্যবহারকারীরা গণমাধ্যমের তারকাদের সঙ্গে নিজেদের একধরনের বন্ধন ভাবতে বা গড়ে তুলতে শুরু করেন। যেমন : সমাজের অন্যদের সঙ্গে গড়ে ওঠা সম্পর্কগুলোর মতোই এ সম্পর্কের মধ্যেও একইরকম আবেগ কাজ করে। তাদের সুখবরে আমরা আনন্দিত হই; তাদের ব্যথায় ব্যথিত হই। প্রিয় খেলোয়াড়ের দল জিতলে খুশি হই, আর, হেরে গেলে কষ্ট পাই, হতাশ হই কিংবা কখনো কখনো রেগেও যাই।

বিষয়টির আলোচনা প্রথমে গণমাধ্যম ও যোগাযোগ শাস্ত্রে শুরু হলেও পরে তা মনোবিজ্ঞানেও অন্তর্ভুক্ত হয়।