Media School

Dhaka    Wednesday, 27 August 2025

By সজীব সরকার

বুদ্ধিমত্তার ৯ ধরন (9 types of Intelligence)

Media School August 20, 2025

প্রতীকী ছবি।

মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে (human intelligence) বিশদভাবে জানার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা চলমান। এসব গবেষণার মধ্য দিয়ে বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন ধরনের কথা উঠে এসেছে। এ বিষয়ে বর্তমানে হাওয়ার্ড গার্ডনারের (Howard Gardner) তত্ত্বটি বেশ আলোচিত ও জনপ্রিয়।

হাওয়ার্ড তার তত্ত্বে (থিওরি অব মাল্টিপল ইন্টেলিজেন্স) ৯টি ভিন্ন ধরনের বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। যেমন :

১. ভাষাগত বুদ্ধিমত্তা (Linguistic Intelligence): ভাষাগত দক্ষতা; যেমন: ভালো বলতে, পড়তে ও লিখতে পারার সক্ষমতা থাকা। যেমন : ভালো বক্তা, লেখক বা কবিদের মধ্যে এ দক্ষতা থাকে।
২. যৌক্তিক-গাণিতিক বুদ্ধিমত্তা (Logical-Mathematical Intelligence): যুক্তির ব্যবহার জানা, যুক্তি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিতে পারা এবং গাণিতিক সমস্যা সমাধানে দক্ষতা। যেমন : গণিতবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, সফটঅয়্যার ডেভেলপার, বিজ্ঞানী ইত্যাদি। এ ছাড়া, আর্থিক বিষয়গুলো (যেমন : পুঁজি, সঞ্চয়, আর্থিক লেন-দেন বা এ ধরনের হিসাব) বুঝতে পারার সক্ষমতা, দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি সমস্যাগুলো গুছিয়ে সমাধান করতে পারার সক্ষমতা ইত্যাদি।
৩. সঙ্গীত-বিষয়ক বুদ্ধিমত্তা (Musical Intelligence): সঙ্গীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জরুরি বিষয়গুলো (যেমন : ছন্দ-সুর-তাল-লয়, সঙ্গীতের নানা ধরন ইত্যাদি) বুঝতে পারার বিশেষ দক্ষতা।
৪. কায়িক বা দেহ সঞ্চালনা-বিষয়ক বুদ্ধিমত্তা (Bodily-Kinesthetic Intelligence): নানা কাজে দেহের গতি বা অঙ্গসঞ্চালনের বৈশিষ্ট্যগুলোকে কাজে লাগাতে পারার দক্ষতা। যেমন : নাচ বা খেলাধুলায় পারদর্শিতা।
৫. স্থানিক বা স্থান ও দূরত্ব-বিষয়ক বুদ্ধিমত্তা (Spatial Intelligence): স্থান, দূরত্ব ও এ ধরনের বিষয়গুলো বুঝতে পারা এবং এসব তথ্য কাজে লাগাতে পারার দক্ষতা। যেমন : মানচিত্র বোঝা, নতুন জায়গায় গিয়েও সহজেই পথ-ঘাট বুঝতে পারা, খেলাধুলার ক্ষেত্রে মাঠ ও দূরত্বের বিষয়গুলো বুঝতে পারা; চিত্রশিল্প, ভাস্কর্য বা স্থাপত্যকলায় জায়গা বা বস্তুর মাপজোখ সম্বন্ধে দক্ষতা ইত্যাদি। চিত্রশিল্পী, স্থপতি বা ভূগোলবিদরা এমন বৈশিষ্ট্যের ব্যক্তির উদাহরণ।
৬. আন্তঃব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা (Interpersonal Intelligence): আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের বিশেষ দক্ষতা থাকা; যেমন : মানুষের সঙ্গে মিশতে পারা, তাদের বুঝতে পারা এবং যথাযথ ও কার্যকরভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারার দক্ষতা। এমন বুদ্ধিমত্তার অধিকারীদের উদাহরণ হতে পারে রাজনীতিবিদ, পরামর্শক, শিক্ষক বা সমাজকর্মী ইত্যাদি।
৭. অন্তর্ব্যক্তিক বুদ্ধিমত্তা (Intrapersonal Intelligence): ব্যক্তির নিজেকে বুঝতে পারার দক্ষতা থাকা; যেমন : নিজের আবেগীয় দিকগুলো সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা ও এর ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা, নিজের ভালো-মন্দ দিকগুলো নিজেই খুঁজে বের করতে পারার সক্ষমতা থাকা ইত্যাদি। অর্থাৎ, নিজের সঙ্গে নিজের ভালো বোঝাপড়া থাকার জন্য দরকারি দক্ষতা বা বুদ্ধিমত্তা। এমন ব্যক্তিরা স্থিতধী ও চিন্তাশীল হতে পারে। তারা নিজেদের উদ্দেশ্য পূরণে অবিচল ও স্থির থেকে লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে সহজেই।
৮. প্রকৃতি-বিষয়ক বুদ্ধিমত্তা (Naturalistic Intelligence): প্রকৃতি ও পরিবেশকে বুঝতে পারা এবং এর সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারার দক্ষতা। যেমন : এ ধরনের বুদ্ধিমত্তার অধিকারীদের মধ্যে সাধারণত বাগান করা, পাখি দেখা বা পোষা, প্রকৃতির ছবি তোলা বা সংগ্রহ ইত্যাদি বিষয়ে আগ্রহ ও দক্ষতা থাকে। তারা আবহাওয়া ও এর পরিবর্তনের বিষয়গুলো ভালো বুঝতে পারে। যেমন : কৃষক, প্রকৃতি ও পরিবেশ-বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্ট, জীববিজ্ঞানী, পরিবেশবিজ্ঞানী, উদ্ভিদবিজ্ঞানী, প্রাণিবিজ্ঞানী ইত্যাদি।
৯. অস্তিত্ব সম্বন্ধীয় বুদ্ধিমত্তা (Existential Intelligence): মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কে গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে সত্যকে জানার দক্ষতা। যেমন : এমন বৈশিষ্ট্যের ব্যক্তিরা জন্ম ও মৃত্যু, কর্ম, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয়কে সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে দেখার ও অনুধাবনের বিশেষ সক্ষমতা রাখে। অর্থাৎ, এ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ব্যক্তিরা মূলত চিন্তাশীল মানুষ (যেমন : দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিক্ষক ইত্যাদি)।

গার্ডনারের এ তত্ত্বটি বিশ্লেষণ করে মানুষ সাধারণত কী কী উপায়ে, কোন কোন উৎস থেকে, কীভাবে ও কতোটা শেখে এবং কোন বিষয়ে কতোটা দক্ষতা অর্জন ও প্রদর্শন করে - এ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।