Media School

Dhaka    Thursday, 09 May 2024

By সজীব সরকার

মিডিয়া ট্রায়াল (Media Trial)

Media School May 11, 2021

আদালতে প্রমাণিত হওয়ার আগে গণমাধ্যম কাউকে দোষী বলতে পারে না। ছবি : newindianexpress.com

সমাজে প্রতিদিনই অপরাধমূলক কোনো না কোনো ঘটনা ঘটছে অথবা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ উঠছে। এসব ক্ষেত্রে নিয়ম হলো যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার হবে এবং আদালতের রায়ে দোষী প্রমাণিত হলেই কেবল একজন ব্যক্তিকে দোষী বা অপরাধী বলা যাবে- এর আগে নয়। কিন্তু এসব ঘটনায় প্রায়ই গণমাধ্যমগুলো ঘটনা ঘটার বা অপরাধের অভিযোগ ওঠার পরপরই একজন ব্যক্তিকে দোষী ধরে নিয়ে খবর প্রকাশ শুরু করে; এটিই হলো 'মিডিয়া ট্রায়াল'।

অর্থাৎ আদালতে বিচার হওয়ার আগে মিডিয়াই যখন বিচারকের ভূমিকা নেয় এবং আদালতে অপরাধ প্রমাণের আগেই কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে, তখন সেটিই হলো মিডিয়া ট্রায়াল।

অনেক সময় পত্রিকায় এমন শিরোনাম লেখা হয় : স্কুলছাত্রী ধর্ষিত, ধর্ষক 'অমুক' পলাতক। এ ঘটনায় মূল তথ্য দুটি: এক. কোনো একটি স্থানে একজন স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, এবং দুই. এ ঘটনায় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, 'ধর্ষক' পলাতক; অর্থাৎ যার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, সে যদি পলাতক থাকে, তার অর্থ হলো ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিচার এখনো হয়নি বা তিনি আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হননি। এ ঘটনায় তাই লিখতে হবে : 'স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ, অভিযুক্ত [অমুক] পলাতক'।

মনে রাখতে হবে, এখানে তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ : এক. যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় ঘটনাটির বিচার হতে হবে; দুই. ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে - আদালতে এটি প্রমাণিত হতে হবে, এবং তিন. অভিযুক্ত ব্যক্তিই ধর্ষণ করেছে - সেটিও আদালতে প্রমাণ হতে হবে। এর পরই কেবল খবরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে 'ধর্ষক' বলা যাবে, এর আগে কোনোভাবেই নয়।

কোনো অপরাধের বা এমন অভিযোগের পর এর বিচার করার অধিকার কেবল আদালতেরই রয়েছে; গণমাধ্যম কোনোভাবেই এমন বিচারের অধিকার রাখে না। তাই কোনো ঘটনা ঘটার পর আদালতে তা প্রমাণিত হওয়ার আগে বা বিচারাধীন অবস্থায় কোনো ব্যক্তিকে ধর্ষক, চোর, খুনি ইত্যাদি শব্দ ব্যবহারে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।

অপরাধের অভিযোগ ওঠার পর কাউকে খুনি, ধর্ষক বা চোর বলে খবর প্রকাশ হলে পরিবার ও সমাজে ওই ব্যক্তি হেয় হন। কিন্তু আদালতের রায়ে ওই ব্যক্তি যদি নির্দোষ প্রমাণিত হন, তখন ওই ব্যক্তির হারানো সম্মান গণমাধ্যম ফিরিয়ে দিতে পারে না। তাই এ ধরনের ঘটনার খবর প্রকাশের ব্যাপারে গণমাধ্যমগুলোকে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হতে হবে।