Media School

Dhaka    Wednesday, 08 May 2024

By সানজিদা বিনতে রশিদ

মিডিয়াগুলোতে নারীর উপস্থাপনের ধরন বদলাতে হবে

Media School October 26, 2020

বর্তমান সময়ে কর্পোরেট মিডিয়া খুবই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপন এবং এর বাজারও। এই আধুনিকতার যুগে যেখানে দূর হওয়ার কথা জেন্ডার বৈষম্য, সেখানে আজ নারীদেরকে দেখা হচ্ছে পণ্যের মত করে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া হোক কিংবা প্রিন্ট মিডিয়া, দুই দলই নারীর সমতা নিয়ে বুলি আওড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত; কিন্তু আবার তারাই নারীকে নেতিবাচকভাবে বিজ্ঞাপনে উপস্থাপন করছে নারীকে রূপান্তর করছে পণ্যে।

প্রায় তিন দশক ধরে জেন্ডার বৈষম্য নিয়ে যে তাত্ত্বিক, চিন্তাবিদ ও নারীবাদীরা কাজ করেছেন, তারা বলে থাকেন নারীর সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং নীতিনির্ধারণে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কাজটি গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। এ বিষয়গুলো যখন কম-বেশি এগিয়ে চলছে, তখনই কর্পোরেট মিডিয়া নারীকে বৈষম্যের নতুন বোতলে বাজারজাত করতে অনেকটুকুই সফল হয়েছে। প্রতিটি সেকেন্ডে, প্রতিটি আয়োজনে নারীকে বিক্রি করছে তারা মুনাফার বাজারে! সাবান, তেল কিংবা রঙ ফর্সাকারী ক্রিম - এসবের বিজ্ঞাপনে নারীকে এমনভাবে দেখানো হয়, যেন নারীকেই হতে হবে রূপে-গুণে অপরূপা। কেন পুরুষ নয়? কেন পুরুষকে অপরূপ হতে হবে না? নারীকে উপস্থাপন করা হচ্ছে উন্মুক্ত পিঠে, আর লিখে দেওয়া হচ্ছে "সীমাহারা"! নারীর এই উন্মুক্ত পিঠ পুরুষ দর্শকের চোখে কতোই না উপভোগ্য!

বাংলাদেশের বিলবোর্ডগুলোতেও দেখা যায় মেয়েদের আধিপত্য। নুন থেকে শুরু করে ঘরের রান্না, সাজগোজের সামগ্রীতেই মডেল মেয়েরা। কিন্তু রডের বিজ্ঞাপনে, সিমেন্টের বিজ্ঞাপনে দেখা যায় না কোনো মেয়েকে; সেখানে দেখা যায় পুরুষ মডেলের ছবি। এ থেকে কী বোঝা যায়? মেয়েদের জগৎ শুধু ঘরেই সীমাবদ্ধ আর পুরুষের জগৎ স্থাপত্যশিল্পের মত সৃজনশীল, মননশীল কাজে! কিন্তু কেন এই বৈষম্য? বিশেষজ্ঞ কিংবা প্রকৌশলী নারী থাকলে কি পণ্য বিক্রি হবে না? নাকি বাংলাদেশে কোনো নারী বিশেষজ্ঞ বা প্রকৌশলী নেই? পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কালে কালে নারীকে এইভাবে উপস্থাপন করছে এ দেশের মিডিয়াগুলো।

ফলে আমরা প্রতিনিয়তই বিজ্ঞাপনে দেখছি, 'অর্ধাঙ্গের' মন জয় করার জন্য নারীরা সয়াবিন তেল দিয়ে রান্না করছে। আবার, নারিকেল তেল দিয়ে দীর্ঘ কালো চুল নিয়ে 'অর্ধাঙ্গের' সামনে যাচ্ছে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। অর্থাৎ প্রতিবারই আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে – নারী, ওগুলোই কেবল তোমার কাজ। ওয়াশিং পাউডার, হারপিক কিংবা সাবানের বিজ্ঞাপনের মধ্যে কাপড় ধোয়া, টয়লেট পরিষ্কার করা - সবখানে নারীকেই উপস্থাপন করা হচ্ছে। এসবের বাইরে নারীদের তেমন কোনো বিজ্ঞাপনই নেই! কিন্তু কেন?

নারীর জন্ম তো কেবল ঘরে থাকার জন্যে নয়; মননশীলতা কিংবা সৃজনশীলতার মধ্যেও নারীকে ফুটিয়ে তুলতে হবে প্রত্যেকটি মিডিয়াতে।