Media School

Dhaka    Friday, 17 May 2024

By সজীব সরকার

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে গল্প

Media School June 17, 2020

এক.
ইউটিউবে একটি বক্তব্য শুনেছিলাম; সেখানকার একটি উদাহরণ এ প্রসঙ্গে মনে হলো, তাই এর সূত্র ধরেই শুরু করছি: গাড়িতে যাত্রীর সিটে যে বসে থাকে, সে চাইলে পাশের সিটের ব্যক্তির সাথে কথা বলতে পারে, ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করতে পারে, বাইরের দৃশ্য উপভোগ করতে পারে এমনকি চাইলে ঘুমিয়েও যেতে পারে। কিন্তু যে ড্রাইভার? তার পক্ষে এর কোনোকিছুই সম্ভব নয়; একটু অন্যমনস্ক হলেই রয়েছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

এই উদাহরণের ড্রাইভারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বেশ মিল রয়েছে; শিক্ষার্থীরা এই ড্রাইভারের মতোই। যে শিক্ষার্থী পূর্ণ মনোযোগের সাথে তার শিক্ষাজীবনের পুরো পথ পাড়ি দেবে, তার জীবনে দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রায় নেই বললেই চলে। আর যে শিক্ষার্থী গাড়ির পেছনের সিটে বসা যাত্রীর মতো অমনোযোগী হবে, তার জীবনে দুর্ঘটনা অবশ্যম্ভাবী।

অর্থাৎ, জীবনে সফল হতে হলে শিক্ষার্থীকে নিজের জীবনের চালকের আসনে উপবিষ্ট হতে হবে; গভীর মনোনিবেশ ছাড়া নিজের জীবন পরিচালিত হতে দেয়া যাবে না। দিলেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

দুই.
শিক্ষক হিসেবে ক্লাসরুমে বা পরীক্ষার হলে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতাই হয়। একটি দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হলো, নকলরত কোনো শিক্ষার্থীর খাতা বাতিল করা।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে একটি গল্প এখানে মনে পড়ছে:

একবার একটি পাখি এক মৌমাছিকে জিজ্ঞেস করলো, এই যে তুমি এতো কষ্ট করে মধু তৈরি করো, আর একদিন একজন মানুষ এসে তোমার কাছ থেকে সেটি চুরি করে নিয়ে যায়, তোমার খারাপ লাগে না?

মৌমাছিটি উত্তরে বললো, প্রথমদিকে খারাপ লাগতো এজন্য যে, আমি কষ্ট করে একটি জিনিস তৈরি করছি, কিন্তু আরেকজন এসে সেটি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু এখন আর খারাপ লাগে না।
পাখিটি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কেন?

মৌমাছিটি বললো, আমি পরে ভেবে দেখলাম, মানুষ কেবল আমার তৈরি মধুটুকু চুরি করে নিয়ে যায়, কিন্তু আমার মধু তৈরির যে কৌশল, যে দক্ষতা, সেটি চুরি করে নিয়ে যেতে পারে না; আমার এই অতুলনীয় বিদ্যা আমারই থেকে যায়।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনি যদি পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিক্ষকের চোখ এড়িয়ে পকেটের কাগজ বা অন্য কারো লেখা থেকে চুরি করে পরীক্ষার খাতায় লিখে থাকেন এবং খাতায় ভালো নম্বরও পেয়ে যান, তাতে আনন্দিত হওয়ার মতো কিছু নেই; কেননা বাকি জীবন আপনার কর্মজীবনে তা কোনো কাজে আসবে না। অন্যেরটা দেখে একটা ভালো উত্তর নকল করা যায়, কিন্তু এভাবে অন্যের মেধা, অন্যের দক্ষতা বা সৃজনশীলতাকে নকল বা চুরির মাধ্যমে নিজের করে নেয়া যায় না। তাই নকলের মতো অকার্যকর একটি পদ্ধতিতে ভালো নম্বর পাওয়ার মধ্যে আসলে কোনো উপকার নেই।

আর যাদের খাতা দেখে অন্যরা লিখে নেয়, তাদেরও মন খারাপ করার কিছু নেই; তাদের উদ্দেশে বলছি, অন্য কেউ আপনার একটা প্রশ্নের উত্তর কিংবা একটা অ্যাসাইনমেন্ট নকল করতে পেরেছে, কিন্তু আপনার যে মেধা, আপনার যে সৃষ্টিশীলতা, আপনার যে যোগ্যতা, তাকে সে চুরি করতে পারেনি, কেউ একে চুরি করতে পারে না।

পরীক্ষার খাতায় কী লিখলাম বা কী নম্বর পেলাম, এতো সঙ্কীর্ণ বিষয়ে নিজের জীবনকে সীমিত করা ঠিক নয়। নিজের মধ্যে চিন্তার প্রবণতা আর সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানো অত্যন্ত জরুরি। না হলে চিরকাল পরজীবী-পরগাছা হয়েই থাকতে হবে; জীবন হয়ে উঠবে অভিশপ্ত। এর চেয়ে বরং নিজের চিন্তার বিকাশ ঘটানো গেলে এবং নিজেকে সৃষ্টিশীল করে তুলতে পারলে জীবনের ক্যানভাস হয়ে উঠতে পারে অনন্ত, অসীম আর সুন্দর!

[লেখাটি চ্যানেল আই অনলাইন-এ ২৯ এপ্রিল ২০১৯ প্রকাশিত হয়।]