Media School

Dhaka    Friday, 29 March 2024

By আফসানা আক্তার

স্বাধীনভাবে বাঁচার আলাদা একটা আনন্দ আছে

Media School August 27, 2021

আমাদের দেশের মেয়েদের জীবন কি অদ্ভুত!

ছোটবেলায় গ্রামে এলে যাদের সাথে একসঙ্গে খেলাধুলা করতাম, আজ তারা কেউ কেউ দুই সন্তানের মা। চেহারায় বয়সের ছাপ। আর যাদের এখনও বিয়ে হয়নি, তাদের কত চিন্তা! পড়ালেখা সেই এসএসসিতেই শেষ; তাদের কাছে সেটাই অনেক। এখনও তাদের বিয়ে হচ্ছে না বলে কত চিন্তা। কেউ তো কাঁদেও; নিজেকে খুব দুর্ভাগাও মনে করে। তাদের জীবনের একটাই লক্ষ্য : বিয়ে; সেটাই হচ্ছে না। তাদের জন্যে বিষয়টা আসলেই খুব চিন্তার। আশেপাশের সবার বিয়ে হয়ে গেছে, তারা দু-একজন বাদে। কেন তাদের বিয়ে হচ্ছে না, কবে হবে- এটাই চিন্তার। আর যে মেয়ের সবার আগে বিয়ে হয়েছে, সে জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ করে ফেলেছে; এটার বাইরে জীবনে আর কিছু নেই। তাদের জগতটাই এখানে সীমাবদ্ধ। আর এদিকে আমি কবে পড়া শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হবো, সেই চিন্তা; আমাকে নিজের জন্যে কিছু করতে হবে। আমাদের চিন্তার কত ফারাক! অথচ ছোটবেলায় সবাই এক ছিলাম। কিন্তু সুযোগ এবং সময় সব বদলে দিয়েছে।

তারপর যেটা দেখলাম সেটা হল তাদের চিন্তাধারা। তাদের চিন্তাধারা দেখে মনে হলো, পুরুষ তাদের ডমিনেট করে না, তারাই পুরুষদের ডমিনেট করার সুযোগ করে দেয়। তারা আগে থেকেই ডমিনেটেড হয়ে থাকে। তাদের মতে স্বামী 'পরম ঈশ্বর'; স্বামীকে অবশ্যই শ্রদ্ধা করতে হবে। যার সাথে সারাজীবন থাকতে হবে তাকে অবশ্যই সম্মান করা উচিত; কিন্তু সম্মানটা দুই দিকেরই হতে হবে। কিন্তু তারা তো নিজেদের সম্মান নিয়ে ভাবেই না। এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যেতে ভয় পায়- এই বুঝি স্বামী ফোন করলো! ফোনে না পেলে এই বুঝি গালি দিল! আচ্ছা, তাদের কি এইটুকু স্বাধীনতাও নেই? আসলেই নেই। সব থেকে বড় কথা, এটা তারা চায়ও না। কারণ তারা মনে করে, এটাই স্বামীর কাজ। আর মেয়েদের কাজ সেটা মানা। তাদের মত প্রকাশের কোনো অধিকার নেই। একটাই ভয়, স্বামী যদি ছেড়ে দেয় তখন কী করবে? সমাজ কী বলবে? আমাদের সমাজে আবার ডিভোর্সি মেয়ে মানে পরিবারের জন্যে অভিশাপ। মেয়ের বয়স চৌদ্দ-পনেরো হলেই তাকে বোঝা মনে করে, আর সেখানে ডিভোর্সি!

তাদের মতে, বিয়ে করে আবার চাকরি কী? এসব পড়ালেখা সব বিয়ের পরে চলে যাবে। স্বামী যা বলবে তা-ই হবে। তাহলে পুরুষদের দোষ কোথায়? নারীরাই তো সেই সুযোগটা দিচ্ছে। তারাই বলে দিচ্ছে, 'আমাকে তুমি ডমিনেট করতে পারবে। আমাকে ডমিনেট করো।' আগে থেকেই তারা এই ডমিনেশন মেনে নেয়। তারা হয়তো স্বাধীনতা কী, সেটাই জানে না।

তাদের এই চিন্তাধারার জন্য দায়ী তাদের পরিবার। একটা সময় পর পরিবার তাদের বোঝায়, তুমি এই পরিবারের বোঝা। তোমার জীবনের একটাই কাজ : বিয়ে করে শশুরবাড়ি যাওয়া। আর পরিবারকে এটা ভাবায় সমাজ। সমাজ সেটা ভাবতে বাধ্য করে।

একটা মেয়ের বিয়ে না হলে পরিবার ভাবে, সমাজ কী বলবে। পরিবার এটা ভাবে না যে এটা করে তারা তাদের মেয়ের ভবিষ্যত নষ্ট করছে। কোনো মেয়ের বয়স বেশি হয়ে গেলে একটা খারাপ পরিবারে বিয়ে দিতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না। যার ফলে দিনের পর দিন মেয়েদের অত্যাচার সহ্য করতে হয়। কেউ কেউ লাশ হয়েও ফিরে আসে। তখন এই সমাজ সেই পরিবারকে কী দেয়? সেই মেয়ের জীবন কি ফেরত দিতে পারে? যদি না-ই পারে, তাহলে সেই সমাজের কথা শুনে কেন মেয়েদের অত্যাচারিত হতে দেয়? কেন তাদের এত সুন্দর জীবন নষ্ট করে?

কখন বদলাবে এই সমাজ? কখন মেয়েগুলো বুঝবে, জীবনে শুধু স্বামী-সংসার করে কাটানোই সব না। জীবনটা অনেক সুন্দর। পৃথিবীতে দেখার অনেককিছু আছে, জানার অনেককিছু আছে। স্বাধীনভাবে বাঁচার আলাদা একটা আনন্দ আছে। যেখানে শুধু অন্যের মতামত নিয়ে চলতে হয় না, নিজেরও মতামত দেওয়া যায়, চাইলেই প্রাণ খুলে বাঁচা যায়।

এটা বুঝতে হলেও যথাযথ শিক্ষা অর্জন করতে হবে। সবাইকে এইটুকু শিক্ষা অর্জন করা দরকার। জীবনের মানে বোঝার জন্যে হলেও দরকার।